চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে স্বর্ণের চেইন চুরির অপবাদে স্বামী পরিত্যক্তা এক নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরভাবে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় হামলার শিকার নারীকে উদ্ধার করতে গিয়ে আরও কয়েকজন আহত হন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে এমন অমানবিক ঘটনা জেলা পুলিশ সুপারের নজরে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে নির্যাতিতা নারীর পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে ২৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবারে উপজেলা রুস্তমপুর গ্রামের আমিন উদ্দিনের বাড়িতে। শুক্রবার রাতেই গুরুতর আহত ওই নারীকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান তার স্বজনরা। তাকে বেধড়ক পেটানোর ফলে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখমের সৃষ্টি হয়।
ঘটনার সময় অগোচরে পাশ থেকে মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক নারী ও এক যুবক আরেক নারীর হাত ধরে রেখেছেন। আরেক যুবক তাকে কাঠের লাকড়ি দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছেন।
২ মিনিটেরও বেশি সময়ের ওই ভিডিও ফুটেজে এমন ঘটনার শেষের দিকে নির্যাতিতা নারীকে রক্ষার জন্য কয়েকজন এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়।
বৃদ্ধ আব্দুল মান্নানের সাত ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট তাছলিমা বেগম। আট বছর আগে বিয়ে হয় তার। কিন্তু স্বামী তাকে ছেড়ে যাওয়ার পর বাবার বাড়িতেই থাকতেন তিনি।
কয়েক মাস আগে প্রতিবেশী মোস্তফা মিয়ার ছেলে কাউসার আলমের স্ত্রীর একটি স্বর্ণের চেইন হারিয়ে যায়। কিছুদিন আগে সেটি খুঁজে পেলেও এর জন্য দায়ী করা হয় একই বাড়ির স্বামী পরিত্যক্তা তাছলিমা বেগমকে।
নির্যাতিতা তাছলিমা বেগমের বড় বোন আমেনা বেগম জানান, চেইন চুরির মিথ্যা অভিযোগ এনে তার ছোট বোনকে দায়ী করা হয়।
আর এমন ঘটনার জের ধরেই কাউসার আলমের ছোট দুই ভাই ইয়াসিন ও মোফাচ্ছের এবং তাদের মা শামছুন্নাহার এমন পৈচাশিক নির্যাতন চালান তাছলিমা বেগমের ওপর।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী তাছলিমা বেগম জানান, বিনা কারণেই ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বাড়ির উঠানে তার ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালায়। তিনি চুরির কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
এমন পরিস্থিতিতে স্বজনরা ঘটনার সঠিক বিচার দাবী করে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। এদিকে হাসপাতালে ভর্তির পর ঘটনার শিকার নারীর শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। তবে আপাতত শঙ্কামুক্ত। তাই আরও কয়েকদিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে রোগীকে। এমন তথ্য জানালেন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মনিরুল ইসলাম।
অন্যদিকে রোববার দুপুরে নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ। এ জন্য ফরিদগঞ্জ থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ তেন তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার ইদ্রিস জানান, একটি স্বর্ণের চেইন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মারামারির ঘটনাটি ঘটেছে।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসনে বলেন, উক্ত মারামারির বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।