আজ ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং

সিআইডি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে শিশু সোহানকে খুন করে গৃহশিক্ষক

কে এম নজরুল ইসলাম :

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহানের চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যা মামলার আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৪ মে) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এই মামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ।

আটককৃত হত্যাকারী ফরিদগঞ্জের রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ির শরীফ তালুকদারের ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী আবদুল আহাদ (১৭)। সে ছিল শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহানের গৃহশিক্ষক এবং একই বাড়ির।

পুলিশ জানায়, গত ১৫ মে সন্ধ্যা অনুমানিক ৭টার দিকে নিহত আদিল মোহাম্মদ সোহান (৮) বাড়ির পাশের মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ শেষে তার নিজ বাড়িতে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। পরে তার পিতা আনোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্জ থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

পুলিশ তদন্তকালীন সময় গত ১৯ মে সকাল সাড়ে ৯টায় বাদীর চাচি রেনু বেগম গরুর ঘাসের চাষকৃত নাল জমির পূর্ব পাশে কাঁচা গাব পাড়ার জন্য যায়। সেখানে দুর্গন্ধ ও মাছির উপদ্রব দেখতে পেয়ে সবাইকে অবহিত করেন।

পরে প্রতিবেশীসহ অন্যান্য লোকজন ঘটনাস্থলে এসে মাটির নিচে চাপা দেওয়া একটি শিশুর হাত দেখতে পায়।

ঘটনার সংবাদ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথের নেতৃত্বে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হয়ে শিশুটির মৃতদেহ উত্তোলন করেন। তখন নিখোঁজ শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহানের বাবা-মা মৃতদেহটি তাদের সন্তানের বলে শনাক্ত করে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, পুলিশের সমন্বিত একটি টিম চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটির রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে।

প্রাথমিক তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিহত সোহানের গৃহশিক্ষক আবদুল আহাদকে (১৭ বছর ৬ মাস) গ্রেফতারপূর্বক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে হত্যার কথা স্বীকার করে।

পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজে বলা হয়, গৃহশিক্ষক আবদুল আহাদের পরিবার অভাবী পরিবার ছিল। শিশু সোহানের পরিবারের কাছে ২৫-২৬ হাজার টাকা জমানো ছিল। এই বিষয়টি আহাদ জানতো।

মূলত ভারতের সিআইডি থেকে মুক্তিপণের টাকার জন্য সোহানকে অজ্ঞান করে লুকিয়ে রাখে আহাদ। কিন্তু সে সিআইডিতে দেখেছে কাউকে ৪০ সেকেন্ড নাকে চেপে ধরে রাখলে মরবে না কিন্তু সে অজ্ঞান থাকবে। তবে দুর্ভাগ্যবশত টাইম কিংবা ধরতে সমস্যা হওয়ায় শিশু সোহান তাৎক্ষণিক সেখানে মারা যায়।

মিলন মাহমুদ জানান, শিশু সোহানকে হত্যার পর সে নিজেও সবার সাথে খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু সে হত্যা করে যেখানে রেখে এসেছে, সেখানে না গিয়ে অন্যত্র খোঁজাখুঁজি করে। খুন করার পর সোহানের মাকে ফোন করেছিল আহাদ।

তার ছেলেকে পেতে হলে টাকা দিতে হবে। কিন্তু সোহানের মা সেই ফোনটি বাড়িতে রেখে সোহানকে খুঁজতে যাওয়ায় কল রিসিভ করতে পারেননি এবং টাকা চাওয়ার বিষয়টি শুনতে পারেননি।

পুলিশ সুপার আরো জানান, সোহানের লাশটি হাত দা দিয়ে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে গৃহশিক্ষক আহাদ। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে আহাদের মায়ের ফোন ব্যবহার করে অন্য একটি সিম ব্যবহারের সূত্র ধরে। এছাড়া তার আচার-আচরণও সন্দেহজনক ছিল।

আমাদের প্রথম থেকেই ধারণা হয়েছিল হত্যার পেছনে দূরের কোনো ব্যক্তির হাত নেই। এখানে কাছের কেউই হত্যার সাথে জড়িত।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ, ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান প্রমুখ।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ