আজ ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং

শারদীয় দুর্গোৎসব এর আগমণী বার্তা বা মহালয়া’র ঐতিহাসিক তত্ত্ব

রনজিত কুমার পাল (বাবু)নিজস্ব প্রতিবেদক:

সনাতনধর্মাবলম্বী বা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও সবাই নিশ্চয়ই অবগত আছেন— মহালয়া মানে দুর্গাপূজার দিন গোণা, মহালয়ার ৬ দিন পর মহাসপ্তমী। যদিও এবার ব্যতিক্রম।

মহালয়া মানে পিতৃপক্ষের শেষ আর দেবীপক্ষের শুরু। হিন্দুধর্ম মতে, “পিতৃপক্ষ” হলো পূর্বপুরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যু দেবতা যম। তিনিই সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান।

সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে, বিবাহ করতে গেলে প্রয়াতদের উদ্দেশ্যে অথবা যাদের পিতা-মাতা নেই তাদের পিতা-মাতার জন্য, সাথে সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। তর্পণ মানে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্য জলদান ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা। ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের আগে এদিনে এমনই করেছিলেন।

সেই অনুসারে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্ব পুরুষের স্মরণ করেন, পূর্ব পুরুষের আত্নার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্নাদের মর্তে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াত আত্নার যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও এটি শেষদিন।

পৌরাণিক মতে, মহাভারতের মহাযুদ্ধে কর্ণ যখন মারা যান, তখন তার আত্মাকে খাদ্য হিসেবে গয়না উৎসর্গ করা হয়। বিস্মিত, বিমূঢ় কর্ণ এর কারণ জানতে চান দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে। ইন্দ্র জানান যে, কর্ণ তার জীবদ্দশায় কখনও পূর্ব পুরুষের প্রতি খাবার, জল অর্পণ করেননি, বরং তার দানের বিষয় ছিল শুধুই সোনা।

আর সেই কর্মফলই তার প্রতি ফিরে এসেছে। কর্ণ তা জানতেন না বলে তাকে ১৬ দিনের জন্য পৃথিবীতে ফিরে আসতে সুযোগ দেওয়া হয়, যাতে তিনি পিতৃপুরুষকে জল এবং খাবার অর্পণ করতে পারেন। এই সময় কালই পিতৃপক্ষ হিসাবে পরিচিত হয়।

মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথির নাম হল প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। মহিষাসুর মর্দিনী দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস।

পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। ব্রহ্মার বর অনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হতে চায়। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী সন্মিলিতভাবে “মহামায়া” এর রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সুসজ্জিত সিংহ বাহিনী দেবী দুর্গা নয় দিন ব্যাপী যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করলেন । জয় মা দুর্গা।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ